অলৌকিক ঘটনা কি কেবল নবি রসূলদের সাথেই ঘটে?

অলৌকিক ঘটনা কি কেবল নবি রসূলদের সাথেই ঘটে?

= না। এমন অনেক ব্যক্তি ছিলেন যারা নবি অথবা রসূল ছিলেন না কিন্তু তাদের সাথে অলৌকিক ঘটনা ঘটেছে। 

[] সূরা আল-বাকারা (২:২৫৯) :

তুমি কি তাকে দেখনি, যে এক জনপদের পাশ দিয়ে যাচ্ছিল, যা ছিলো ধ্বংসস্তূপে পরিণত? সে বলল, "আল্লাহ কীভাবে এ জনপদকে তার মৃত্যুর পর পুনরুজ্জীবিত করবেন?" তখন আল্লাহ তাকে মৃত করে দিলেন একশত বছরের জন্য, এরপর তাকে পুনর্জীবিত করে বললেন, "তুমি কতোকাল ছিলে?" সে বললো, "একদিন অথবা একদিনের কিছু অংশ।" আল্লাহ বললেন, "না, তুমি ছিলে একশত বছর। এখন তোমার খাদ্য ও পানীয়ের দিকে তাকাও—তা এতদিনেও পরিবর্তিত হয়নি। আর তোমার গাধার দিকেও তাকাও—এটা তো আমরা তোমার জন্য এক নিদর্শন বানিয়েছি। আর আমরা হাড়গুলোকে কীভাবে একত্র করি এবং পরে মাংস পরিয়ে দিই, তা দেখো।" যখন সব পরিষ্কার হয়ে গেলো, তখন সে বললো, "আমি জানি নিশ্চয়ই আল্লাহ সব কিছুর ওপর ক্ষমতাবান।"

এ আয়াতে আল্লাহ তায়ালা একজন ব্যক্তির কথা বলছেন যাকে ১০০ বছরের জন্য মৃত রাখা হয়েছিলো এবং তারপর জীবন করা হয়েছিলো।

[] আসহাবে কাহাফ (আরবি: أَصْحَابُ ٱلْكَهْفِ) অর্থাৎ "গুহাবাসী যুবকগণ" হলেন একদল ন্যায়পরায়ণ যুবক, যাদের কাহিনি কুরআনে বর্ণিত হয়েছে সূরা কাহাফে (সূরা ১৮, আয়াত ৯-২৬)।

একটি রাজ্যে কিছু যুবক বসবাস করতো, যেখানে শাসক ছিলো একজন কঠোর মুশরিক। ধারণা করা হয়, তিনি ছিলেন রোমান সম্রাট ডেকিয়ানুস (Decius)। ওই যুবকেরা আল্লাহর একত্বে বিশ্বাসী ছিলো এবং তারা শিরক ও মূর্তিপূজাকে ঘৃণা করে তা প্রত্যাখ্যান করেছিলো। রাজার চাপিয়ে দেয়া ধর্মীয় নিপীড়নের হাত থেকে রেহাই পেতে তারা আল্লাহর ওপর ভরসা করে একটি গুহায় আশ্রয় নেয়। আল্লাহর কৃপায় তারা ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে পড়ে এবং দীর্ঘ ৩০০ বছর সেখানে নিদ্রায় থাকে, এরপর আরও ৯ বছর যোগ হয়। কুরআনের সূরা আল-কাহফের ২৫ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে: "তারা তাদের গুহায় ৩০০ বছর অবস্থান করেছিলো, অতঃপর ৯ বছর অতিরিক্ত যুক্ত করা হয়েছিলো।" এই দীর্ঘ সময়েও তাদের দেহে কোনো পরিবর্তন আসেনি; আল্লাহই তাদের হেফাজত করেছিলেন।

[] "সূরা আল-বুরুজ" (সূরা ৮৫)-এ এমন একটি ঘটনার উল্লেখ রয়েছে, যার বিস্তারিত বিবরণ পাওয়া যায় সহীহ মুসলিমের একটি প্রসিদ্ধ হাদীস এবং ইসলামি ইতিহাস থেকে। কুরআনে ঘটনাটি সংক্ষেপে এসেছে, তবে হাদীসে তা সুস্পষ্টভাবে বর্ণিত হয়েছে।

একজন বালকের কথা বলা হয়েছে, যাকে সাধারণভাবে "গোলাম" বা সাহিবুল-উখদূদ (অর্থাৎ খাঁদে নিক্ষিপ্ত লোকদের যুগের ছেলে) বলা হয়। সে এমন এক রাজ্যের অধিবাসী ছিলো যেখানে রাজা নিজেকে খোদা হিসেবে দাবি করতো এবং প্রজাদের তারই উপাসনায় বাধ্য করতো। এই রাজা একজন জাদুকর রেখেছিলো, যার জাদুর মাধ্যমে সে জনগণকে বিভ্রান্ত করতো। যাদুকর যখন বৃদ্ধ হয়ে পড়লো, তখন রাজা ভাবলো তার বিকল্প তৈরি করতে হবে। তাই সে এক বুদ্ধিমান ছেলেকে নিয়ে এসে জাদুকরের অধীনে শিক্ষানবিশ হিসেবে নিযুক্ত করলো, যাতে ছেলেটি পরবর্তীতে তার স্থলাভিষিক্ত হতে পারে। এই বালক এক সময় এক রাহিবের (আল্লাহভীরু সাধুজন) সাথে সাক্ষাৎ করে, যিনি তাকে তাওহীদের শিক্ষা দেন। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সে আল্লাহর একত্বে বিশ্বাসী হয়ে উঠে। আল্লাহ তাকে অলৌকিকভাবে মানুষের চিকিৎসা করার ক্ষমতা দেন, যার মাধ্যমে সে কুষ্ঠরোগী ও অন্ধদেরও আরোগ্য করে দিতো। তার মাধ্যমে বহু মানুষ উপকার পেতে শুরু করে। এই খবর রাজা পর্যন্ত পৌঁছে যায় এবং সে বুঝতে পারে, এই বালকের প্রভাবে মানুষ তার মিথ্যা ঈশ্বরত্বের মুখোশ চিনে ফেলছে। রাজার নির্দেশে তাকে হত্যা করতে সৈন্য পাঠানো হয়। প্রথমবার, সৈন্যরা তাকে একটি পাহাড়ের চূড়ায় নিয়ে গিয়ে নিচে ফেলে দেয়ার চেষ্টা করে, কিন্তু ছেলেটি আল্লাহর কাছে দোয়া করে, ফলে পাহাড় কেঁপে উঠে এবং সৈন্যরা পড়ে গিয়ে মারা যায় — সে নিজে অক্ষত থাকে। পরবর্তীতে, তাকে নৌকায় করে সমুদ্রে নিয়ে যাওয়া হয় এবং সেখানে ফেলে দেয়ার চেষ্টা করা হয়, কিন্তু সেখানেও আল্লাহর কৃপায় সে বেঁচে যায় এবং ফিরে আসে। প্রতিবার ফিরে এসে সে রাজাকে জানায়: "তুমি আমাকে কখনোই হত্যা করতে পারবে না, যতক্ষণ না তুমি আল্লাহর নামে তা করো।" শেষ পর্যন্ত রাজা ছেলের কথা মেনে নেয় এবং জনতার সামনে ঘোষণা করে: "আমি এই ছেলেকে হত্যা করছি আল্লাহর নামে, যে এই ছেলের প্রভু।" রাজা তীর নিক্ষেপ করলে ছেলেটি মৃত্যুবরণ করে। কিন্তু এই ঘটনার পর জনগণ বুঝে যায়, ছেলেটির বিশ্বাসই ছিলো সত্য। ফলে অনেকেই আল্লাহর ওপর ঈমান আনতে থাকে। এতে রাজা অত্যন্ত রুষ্ট হয় এবং প্রতিশোধ নিতে আদেশ দেয় খাঁদ খনন করে তাতে আগুন জ্বালাতে। যারা আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস এনেছিল, তাদের জীবন্ত অবস্থায় আগুনে নিক্ষেপ করে সে হত্যা করে। এদেরকেই বলা হয় ",অশহাবে উখদূদ" — খাঁদে নিক্ষিপ্ত ঈমানদাররা। এই সময় এক মা তার শিশুকে কোলে নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলেন। আগুন দেখে তিনি ভয় পেয়ে কিছুটা পিছিয়ে যান। ঠিক তখনই তার শিশু অলৌকিকভাবে কথা বলে: "মা, ধৈর্য ধরো, তুমি সত্যের ওপর রয়েছো।" এরপর মা সাহস সঞ্চয় করে আগুনে ঝাঁপ দিয়ে শহীদ হন।

> এছাড়াও, কুরআনে সূরা আলে-ইমরান নামে এক সূরা আছে; ইমরান নবি ছিলেন না কিন্তু অনেক ধার্মিক ছিলেন এবং তিনি ছিলেন মরিয়ম (আ.)-এর পিতা, আবার লুকমান নবি ছিলেন না, বরং একজন জ্ঞানী, ধার্মিক ও প্রজ্ঞাবান ব্যক্তি ছিলেন। তাঁর নামে একটি পূর্ণ সূরার নাম: সূরা লুকমান (সূরা ৩১)।

Comments

Popular posts from this blog

ইসলামে চুরির শাস্তি

দার্শনিক নানা বিষয় একত্রে :