মনোবিজ্ঞানের নানা নীতি: আহসানুল ইরফান

মনোবিজ্ঞানের নানা নীতি :

চিন্তা করেছে ও লিখেছে: আহসানুল ইরফান

(There are more posts on Facebook: Philosophy, islam and science in Bangla)

[][][][][][][][][][][][][][][][][][][][][][][][][][][][][][][][][][][][][][][][][]

1. মানুষ যখন দ্রুত হাঁটে বা দ্রুত দৌড়োয় তখন স্লো মোশনের গান গাইতে পারে না, আর যখন ধীরে হাঁটে বা ধীরে দৌড়োয় তখন ফাস্ট গান গাইতে পারে না। 

2. মানুষ যেমন অনুভব করে অধিকাংশ সময় তেমনই করে। 

3. মানুষ অন্যের সে কষ্টই বোঝে যে কষ্ট সে বোঝে।

4. মানুষ যখন অনেক সুখে থাকে তখন অতীতের কষ্টগুলো তার কাছে তেমন কষ্টের মনে হয় না। কিন্তু যখন কষ্টে থাকে তখন অতীতের কষ্টগুলো অনেক কষ্টের মনে হয়।

5. মানুষ নতুন থেকে নতুন কিছু পাওয়ার ইচ্ছে পূরণের দ্বারা সুখ পায়, মানুষের কাছে এক জিনিস সব সময় ভালো লাগে না। পুরোনো কোনো জিনিসও মানুষের কাছে নতুন হতে পারে এভাবে যে সে দীর্ঘ সময় ধরে তা দেখেনি বা পায়নি।

উদাহরণ: অনেক গ্রামের মানুষ শহরে ঘুরতে যায় আর অনেক শহরের মানুষ গ্রামে ঘুরতে যায় কারণ গ্রামের মানুষের কাছে শহর নতুন আর শহরের মানুষের কাছে গ্রাম নতুন, অনেক সময় পুরোনো ছবি দেখতে ভালো লাগে, সব সময় এক ধরণের মানুষের প্রশংসা পেতে ইচ্ছে করে না; নতুন নতুন মানুষের প্রশংসা পেতে ইচ্ছে করে, নতুন নতুন মানুষের কাছে ভালো হতে ইচ্ছে করে। ...   ...   ...

> আমি আমার রুমের চারপাশে তাকাই দেখি কতকিছু, আমার রুমে ফ্যান আছে, লাইট আছে, খাট আছে, বালিশ আছে, টেবিল আছে আরও কতো কী। কিন্তু এগুলোর দ্বারা আমি সুখ পাই না। আমি সুখ পাই নতুন কিছু পাওয়ার দ্বারা। অতীতের মানুষের কাছে এগুলোর অনেক কিছু ছিলল না তবুও তারা সুখে ছিলো।

6. যে ব্যক্তি জীবনে অনেক ভুল করেছে তার ভেতর অন্যের প্রতি অবজ্ঞার অনুভূতি কম আসে আর যে ব্যক্তি জীবনে কম ভুল করেছে তার ভেতর অন্যের প্রতি অবজ্ঞার অনুভূতি বেশি আসে।

7. প্রত্যেক সুখ ও কষ্টই ক্ষণস্থায়ী। মানুষ যে সুখ চায় সে সুখ পাওয়ার আগ পর্যন্ত ওই সুখ অনেক বড়ো মনে হয় কিন্তু পাওয়ার পর তা স্বাভাবিক হয়ে যায়, এবং কষ্টের ক্ষেত্রেও তেমন।

8. নির্দিষ্ট এক সুখ প্রতিবার একই রকম। তা প্রথমবার যেমন, দ্বিতীয়বার, তৃতীয়বার ও অসংখ্যবার ঠিক একই রকম। কিন্তু পাওয়ার আগে মানুষের কাছে মনে হয় তা এবার হয়তো ভিন্ন রকম হবে।

9. সবই পেয়ে গেলে জীবন বোরিং মনে হয়। সুখের প্রকৃতিই এমন যে সুখ পেতে কিছুটা কষ্ট থাকতে হয়।

10. কী ক্ষতি হতে পারে বা কেমন কষ্ট পেতে পারি তা আগেই কল্পনা করে ফেললে ভয় কমে যায়।
যা পেতে ইচ্ছে করে তা আগেই অনেকবার কল্পনা করে ফেললে পাওয়ার ইচ্ছে কমে যায়।
যাকে আঘাত দিতে ইচ্ছে করে তাকে মনে মনে অনেকবার আঘাত দিলে আঘাত দেয়ার ইচ্ছে কমে যায়।

11. যখন মানুষ যে সুখ উপভোগ করে মানুষের কাছে তখন সে সুখ বড়ো মনে হয়।

12. অনেক মানুষ আছে যারা যখন সুখে থাকে তখন মনে করে পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষ তার মতোই সুখে আছে আর যখন কষ্টে থাকে তখন মনে করে পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষ তার মতোই কষ্টে আছে কারণ সে তার নিজের অভিজ্ঞতার ওপর নির্ভর করে reasoning করে এমন ফলাফল পায়।

13. জীবনে কষ্ট না থাকলে মানুষের কাছে তা বোরিং লাগে আর তখন মানুষ নিজেই নিজেকে কষ্ট দেয়ার চেষ্টা করে, হায়ালি করা শুরু করে, উদ্ভট নানা কাজ করে।

14. মানুষ যখন খারাপ হয়ে যায় :

১. খারাপ শব্দ ব্যবহার করে শান্তি পায়।
২. হেয়ালি করে আনন্দ পায়। (অর্থাৎ অনেক careless হয়ে যায়।)
৩. কোনো নিয়ম মানতে চায় না, নিয়ম কানুন অসহ্যকর মনে হয়।
৪. গায়ে উল্কি অর্থাৎ tattoo করে অথবা নোংরা নানা কাজ করে আনন্দ পায়।
৫. যেকোনো মানুষকে অহেতুক গালি দিয়ে শান্তি পায়।
৬. নারীদের প্রতি ভালোবাসা অনুভব করে না, তাদেরকে ভোগের বস্তু হিসেবে অনুভব করে, আর এমনটা নারীদের ক্ষেত্রেও অর্থাৎ পুরুষদের প্রতি ভালোবাসা অনুভব করে না, তাদেরকে ভোগের বস্তু হিসেবে অনুভব করে।
......

15.  অজ্ঞদের সমাজে স্বাভাবিক মানুষ বোকা অথবা পাগলের মতো। 

16. নিজেকে কখনো অবজ্ঞা করা যায় না।

17. যারা ভালো মনের তারা হিংসা করে না, তারা আফসোস করে। তারা নিন্দা করে না, তারা উপদেশ দেয়।

18. তোমার চেয়ে বেশি যার আছে তাকে দেখে তোমার খারাপ লাগবে। আবার তার চেয়ে বেশি যে ব্যক্তির আছে সেই ব্যক্তিকে দেখে তার খারাপ লাগবে।

19. যা ভালোলাগে তা ঐ সময় মোন থেকে ঘৃণা করা যেতে পারে না।

20. যা হাস্যকর তা কোনো না কোনো দিক থেকে নিম্ন পর্যায়ের কিছু।

21. কারো কাছে টাকা বেশিকিছু, কারো কাছে জ্ঞান বেশিকিছু, কারো কাছে সৌন্দর্য বেশিকিছু...

22. কষ্টের সময় কষ্টের জিনিস শুনতে বা দেখতে ভালো লাগে। ফলে বলতে পারি কষ্টও উপভোগ করা যায়। আনন্দের সময় আনন্দের জিনিস ভালো লাগে। আনন্দের সময় কষ্টের জিনিস ভালো লাগে না। 

23. প্রত্যেক রকমের সুখ ও কষ্টই ক্ষণস্থায়ী।
কিছু সুখ ও কষ্ট অপেক্ষাকৃতভাবে দীর্ঘস্থায়ী এবং কিছু সুখ ও কষ্ট অপেক্ষাকৃতভাবে স্বল্পসময়স্থায়ী।

24. শয়তান মানুষ ভালোদেরকে হয়রানি ও অত্যাচার করে আনন্দ পায়।

25. বড় হতে হতে মানুষের ভেতর অনেক পরিবর্তন আসে। ছোট থাকতে মানুষ লাফালাফি করতে ভালোবাসে, তার ভেতর লাফালাফির অনুভূতি থাকে। কিন্তু বড় হতে হতে ঐ অনুভূতিগুলো আর থাকে না, নতুন অনেক অনুভূতি জন্ম নেয়।

26. মানুষ যেহেতু নিজেকে সবচেয়ে ভালোবাসে আর নিজের স্ত্রী অথবা স্বামী যেহেতু নিজের সবচেয়ে আপন হয় তাই নিজের স্ত্রী অথবা স্বামীর চেয়ে অন্যকাউকে যেমন সন্তান, পিতা-মাতাকে বেশি ভালোবাসা যেতে পারে না। সন্তান ও পিতা-মাতার প্রতি আবেগ থাকে। তাদেরকে নিজ ইচ্ছেতে কেয়ার করা সম্ভব, কিন্তু সবচেয়ে বেশি ভালোবাসা নিজের সঙ্গী হিসেবে যাকে চাওয়া হয় অথবা নিজের স্বামী অথবা স্ত্রীর প্রতিই থাকে।

27. যেকোনো বড়ো কিছুতে ভালো হওয়া চর্চার বিষয়।

28. বাবা-মা শাসন-লুপ :

B সতেরো বছর বয়সের এক ছেলে। সে তার বাবা A-এর দ্বারা অনেক শাসিত হয়। B বড় হওয়ার পর সে একটি সন্তান জন্ম দিলো যে সন্তান হলো C। B সন্তান জন্ম দেয়ার পর চিন্তা করল সে তার সন্তানের ওপর তেমন বেশি বিধিবিধান চাপিয়ে দেবে না কারণ কারো ওপর বেশি বিধিবিধান চাপিয়ে দিলে সেই ব্যক্তি কেমন কষ্ট পায় তা B বোঝে কারণ B নিজে তার বাবা A-এর কারণে ঐ কষ্ট পেয়েছিল। C যখন বড় হলো তখন দেখা গেলো C ভালোভাবে লেখাপড়া করতে পারছে না এবং ভালো চাকরি পাচ্ছে না কারণ C ছোটবেলা থেকে তেমন বেশি শাসিত হয়নি এবং খেলাধুলা ও আনন্দ-উল্লাস করে নিজেকে অনেক দুর্বল বানিয়ে ফেলেছে। C যেহেতু ভালোভাবে লেখাপড়া করতে পারছে না এবং ভালো চাকরি পাচ্ছে না তাই B C-কে তখন অনেক শাসন করা শুরু করল এবং C-এর ওপর নানা বিধান চাপিয়ে দিলো। C কয়েক মাস পর মোটামুটি এক ভালো চাকরি পেলো এবং তারপর বিয়ে করল। বিয়ের পর C একটি সন্তান জন্ম দিলো যে সন্তান হলো D। C সন্তান জন্ম দেয়ার পর চিন্তা করল সে তার সন্তান D-কে অনেক শাসন করবে এবং তার ওপর নানা বিধান চাপিয়ে দেবে নয়তো C নিজে যেমন ছোটবেলা থেকে ভালোভাবে লেখাপড়া না করার ফলে ঝামেলায় পড়েছিল ঠিক তেমন তার সন্তান D-এর সাথেও হবে। D ছোট থেকে C-এর দ্বারা অনেক শাসিত হতে থাকলো। D যখন বড় হলো তখন তার এক মানসিক রোগ হলো যে কারণে সে ভালোভাবে লেখাপড়া করতে পারছিল না ফলে সে ভালো কোনো চাকরি পাচ্ছিল না। এ সময় C চিন্তা করলো D-এর পরিস্থিতি খারাপ হওয়া সত্ত্বেও সে D-কে জোর করবে না কারণ চাকরি পাচ্ছে না এমন পরিস্থিতিতে কারো ওপর নানা বিধান চাপিয়ে দিলে সেই ব্যক্তি কেমন কষ্ট পায় তা C বোঝে কারণ C নিজে তার বাবা B-এর কারণে ঐ কষ্ট পেয়েছিল। D কয়েক মাস পর মোটামুটি এক ভালো চাকরি পেলো এবং তারপর বিয়ে করল। বিয়ের পর D একটি সন্তান জন্ম দিলো যে সন্তান হলো E। D সন্তান জন্ম দেয়ার পর চিন্তা করলো সে তার সন্তান E-কে তেমন বেশি শাসন করবে না, তার ওপর বেশি বিধিবিধান চাপিয়ে দেবে না কারণ কারো ওপর বেশি বিধিবিধান চাপিয়ে দিলে সেই ব্যক্তি কেমন কষ্ট পায় তা D বোঝে কারণ D নিজে তার বাবা C-এর কারণে ঐ কষ্ট পেয়েছিল।

29. আমরা কোনো খারাপ ব্যবহারের মানুষের সম্মুখীন হলে মনে করি পৃথিবীতে হয়তো ওরকম মানুষ কেবল একটাই আছে।

30. অসহনশীল মানুষ কষ্টের কাজের প্রতি অসহ্য অনুভব করে বেশি। আর সহনশীল মানুষ কষ্টের কাজের প্রতি আপসোস অনুভব করে বেশি।

31. না থাকা অথবা না পারার কারণে খারাপ তখনই লাগবে যখন কোনো এক কিছুতে তোমার interest আছে অথবা তুমি প্রয়োজনে চাও। নির্দিষ্ট কিছুতে interest না থাকলে অথবা নির্দিষ্ট কিছু প্রয়োজনে না চাইলে তা না থাকা অথবা না পারার জন্য খারাপ লাগবে না।

32. চকচকে জিনিস অনেক আকর্ষণীয় এবং তার দ্বারা অনেক সুখ পাওয়া যায় কিন্তু চকচকে জিনিসের সাথে একটানা অনেক বেশিক্ষণ থাকলে মস্তিষ্কে অসহ্য আসে।

33. প্রত্যেকেরই আলাদা। একজনকে আমার যেভাবে ভালো লাগবে ঠিক ওভাবে অন্য কাউকে ভালো লাগবে না।

34. প্রত্যেকেরই আলাদা। একজনকে আমার যেভাবে ভালো লাগবে ঠিক ওভাবে অন্য কাউকে ভালো লাগবে না।

35. যখন কোনো জ্ঞানী প্রতিভাবান কেউ একা থাকতে অভ্যস্ত হয়ে যায় তখন সে অনেক সময় মনে করতে পারে সে একাই হয়তো অনেক জানে, অন্যরা হয়তো তেমন জানেই না। কিন্তু বাইরে বের হয়ে যখন অনেক মানুষের সাথে মেশা হয় তখন জানা যায় "নাহ, আরও অনেক প্রতিভাবান জ্ঞানী মানুষ আছে"।

36. যে ভালো সে অনেক সময় মনে করতে পারে অন্যরাও হয়তো তার মতোই ভালো। আবার যে খারাপ সে মনে করতে পারে অন্যরাও হয়তো তার মতোই খারাপ।

37. যখন যেটা ভালো লাগে তখন সেটাই সবচেয়ে সুখের মনে হয়। 
যখন যেটা গুরুত্বপূর্ণ লাগে তখন সেটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মনে হয়।
যখন যেটা সুন্দর লাগে তখন সেটাই সবচেয়ে সুন্দর মনে হয়।
যখন যেটা কষ্টের লাগে তখন সেটাই সবচেয়ে কষ্টের মনে হয়।

38. পৃথিবীতে বেশি সুখেরও নানা কিছু আছে। তবে, পৃথিবীতে এমন কোনো কিছুই নেই যা কখনো বোরিং লাগবে না। যেগুলো থেকে আমরা সুখ পেয়ে থাকি সেগুলো থেকে সুখ পেতে পেতে এক পর্যায়ে তা একঘেয়েমি হয়ে যায়, তখন অন্য এক কিছু থেকে সুখ পেতে মোন চায়। আবার যা একঘেয়েনি হয়ে গেছে তা অনেক পরে গিয়ে আবারও নতুন করে ভালো লাগতে পারে।

> কষ্ট ও সুখ উভয় ক্ষেত্রেই একঘেয়েমি বা boredom ব্যাপারটা আছে।

39. বেঁচে থাকতে মোন চায় না যখন জীবন একঘেয়েমি হয়ে যায়; সুখের নতুন কিছু আর থাকে না।

40. মোন ভালো না থাকলে পরিশ্রম করা যায় না। 

41. এক কষ্ট সবার কাছে কষ্ট নয়।

42. প্রত্যেকে নিজের কষ্টকে সবচেয়ে বড়ো কষ্ট মনে করে।

43. বেঁচে থাকতে চাই না। মারা যেতে চাই। এগুলো বললে পরিশ্রম করতে মোন চাইবে না। মৃত্যুর অপেক্ষা করলে পরিশ্রম করতে মোন চাইবে না।

44. বেশি আনন্দ করার পর জীবন যখন একঘেয়েমি হয়ে যায় সে সময়ের যে কষ্ট তা পরিশ্রমের কষ্টের চেয়ে বেশি
কষ্টের
.
.
.
.

Comments

Popular posts from this blog

অলৌকিক ঘটনা কি কেবল নবি রসূলদের সাথেই ঘটে?

ইসলামে চুরির শাস্তি

দার্শনিক নানা বিষয় একত্রে :