একজন অবাধ্য মানুষকে কীভাবে ইসলামে ফিরে আনা যায় :
একজন অবাধ্য মানুষকে কীভাবে ইসলামে ফিরে আনা যায় :
ঈমান না থাকলে ও ঈমান থাকলে :
◼️ ঈমান না থাকলে :
১. আমার নিজের টাকা আমি দান করবো নাকি করবো না তা আমার নিজের বিষয়।
২. আমি কি বাবা-মা'কে বলেছিলাম আমাকে জন্ম দাও? তাহলে আমি কেন তাদের দায়িত্ব নেবো?
৩. ও ঝামেলায় পড়লে আমার কী। ওরটা ও বুঝুক।
৪. আমার যা মোন চায় তাই করবো। আপনার কী?
> ঈমান না থাকলে মানুষ সাধারণত অনেক অসহনশীল হয়ে যায়। হারাম আনন্দের প্রতি আগ্রহ বাড়ে। অলসতাও বাড়ে (সাধারণত)।
◼️ ঈমান থাকলে :
১. আমি নিজে যেমন কষ্ট পাই ঠিক তেমনি গরিবরাও কষ্ট পায়। তাদেরকে দান করা উচিত।
২. বাবা-মা অনেক আশা নিয়ে আমাকে জন্ম দিয়েছেন তাই আমার তাদের দায়িত্ব নেয়া উচিত।
৩. অন্যদেরকে সাহায্য করো; আল্লাহ তোমাকে সাহায্য করবেন। অন্যদেরকে ক্ষমা করো; আল্লাহ তোমাকে ক্ষমা করবেন।
৪. "আমার যা মোন চায় তাই করবো" এমনটা করা যাবে না। এতে অনেক ক্ষতি হবে।
> ঈমান থাকলে মানুষ অনেক সহনশীল হয়। হারাম আনন্দ ত্যাগ করতে পারে। অনেক পরিশ্রমীও হতে পারে।
[] সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে দিন দিন নোংরামি বেড়েই যাচ্ছে। মানুষ যখন পাপ করতে অভ্যস্ত হয়ে যায় তখন পাপ করাই সঠিক মনে হয়; তখন পাপকে আর বেঠিক মনে হয় না। ফলে ধীরে ধীরে ঈমানও নষ্ট হয়। ধৈর্যের ক্ষেত্রেও এমন। বিপদে ধৈর্য ধরতে হয়, আল্লাহর ইবাদত করতে হয়। যারা তেমন করে না তারা ধীরে ধীরে বিশ্বাস করা শুরু করে যে ধৈর্য না ধরাই সঠিক। ফলে ধীরে ধীরে ঈমানও নষ্ট হয়।...
◼️ ইসলামে যেগুলো মুবাহ (ঐচ্ছিক) আর যেগুলো মুবাহ (ঐচ্ছিক) নয় :
1. ইসলাম বিধর্মী কাউকে বিয়ে করা বাদে কে কাকে বিয়ে করবে না করবে তা মুবাহ বা ঐচ্ছিক; কাকে করবে না করবে সেটা একজনের নিজস্ব বিষয়।
কিন্তু,
2. ইসলামে নামাজ পড়া মুবাহ বা ঐচ্ছিক নয়। কেউ নামাজ পড়বে নাকি পড়বে না তা ঐচ্ছিক নয়, বরং ফরজ বা বাধ্যতামূলক।
3. ইসলামে খেলাধুলা করা অথবা না করা মুবাহ বা ঐচ্ছিক এবং কেউ কারো সাথে মিশবে নাকি না মিশবে সেটা মুবাহ বা ঐচ্ছিক।
> তুমি না করলে ভালো অন্যদের সমস্যা হবে এমনটা তোমার নিজস্ব বিষয় নয়।
কিন্তু,
4. ইসলামে আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা মুবাহ নয় বা ঐচ্ছিক নয়। ইসলামে আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করা নিষেধ।
5. ইসলামে কে কোন ধরনের চাকরি করবে না করবে সেটা মুবাহ বা ঐচ্ছিক।
কিন্তু,
6. ইসলামে যাদের যাকাত দেয়ার সামর্থ্য আছে তাদের যাকাত দেয়া ফরজ বা বাধ্যতামূলক।
.
.
◼️ তবুও ইসলাম পালন করি.... :
ইসলামের নানা বিষয় পরিস্কার নয়। আল্লাহ আগে থেকেই জানতেন অনেক মানুষ জাহান্নামে যাবে তবুও তিনি কেন তাদেরকে বানালেন?
[] রাত দিন ফুল ফল বিভিন্ন রঙ এ সবকিছুই প্রয়োজন। যারা খারাপ তারাও প্রয়োজন। তাহলে আল্লাহ খারাপদেরকে জাহান্নামে কেন দেবেন?
[] আল্লাহ অনেক নবি ও রসূল পাঠিয়েছেন, তাহলে তিনি জানের কীভবে একজন ভালো মানুষ বানানো যায়। তাহলে যারা খারাপ তাদেরকেও আল্লাহই বানিয়েছেন। তাহলে তিনি কেন আবার খারাপদেরকে জাহান্নামে দেবেন?
[] আমরা যখন কোনো গাছ কাটি, অথবা কোনো প্রাণীকে হত্যা করি তখন তা আমাদের কাছে অন্যায় মনে হয় না, কারণ আমরা এমনটা দেখে দেখে বড়ো হয়েছি, আমাদের কাছে তা অনুচিত অনুভব হয় না। যারা খারাপ মানুষ তাদের অনেকেরও অন্যায় করার সময় "এটা করা উচিত নয়" এমন অনুভব হয় না, তাই তারা অন্যায় করে। তাহলে আল্লাহ কেন তাদেরকে জাহান্নামে দেবেন?
[] মুহাম্মাদ (স.) -এর ওপর যখন নানা আয়াত নাজিল হচ্ছিলো তখন তিনি কেন আল্লাহকে জিজ্ঞেস করেননি "অমুসলিমরা কেন 'অনন্তকালের' জন্য জাহান্নামে থাকবে?"
[] এমন হাদিস কেন পাওয়া যায় না যেখানে সাহাবিরা আল্লাহর ন্যায়নিষ্ঠতা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন?
[] যে সকল হিন্দু খ্রিষ্টান শিক্ষিত নয় এবং অনেক গরিব তারা কেন জাহান্নামে যাবে? তারা তো কুরআন পড়তে পারে না। অনেক অমুসলিম রিকশাওয়ালা আছে, ভ্যান ওয়ালা আছে তারা কেন জাহান্নামে যাবে?
[] যখন আদম ও হাউয়া নিষিদ্ধ ফল খেলেন তখন আল্লাহ তাদেরকে শাস্তি হিসেবে কিছু সময়ের জন্য জাহান্নামে কেন রাখলেন না? বরং পৃথিবীতে পাঠালেন। আল্লাহ আদম ও হাউয়া (আ.) কে ক্ষমা করলেন কিন্তু ইবলিসকে কেন ক্ষমা করলেন না? কেন ইবলিশকে শাস্তি হিসেবে কিছু কালের জন্য জাহান্নামে রাখা হলো না? বরং মানুষের শত্রু হতে দেয়া হলো।
[] কিছু বিষয় আছে যেগুলো মুহাম্মদ (স.) জানতে আল্লাহরকে প্রশ্ন করার প্রয়োজন নেই। তিনি ফেরেশতার মাধ্যমেই জানতে পারবেন। যেমন পৃথিবীর বাইরে আর কী কী আছে? চাঁদ কতোটা দূরে। এগুলো মুহাম্মদ (স.) জিবরাইল (আ.) -এর থেকেই জেনে নিতে পারতেন, আল্লাহর কাছ থেকে সরাসরি জানার প্রয়োজন নেই।
[] আল্লাহ কীভাবে পরম করুণাময় ও অতী দয়ালু?
[] কেন সাহাবীরা মুহাম্মদ (স.) - কে জিজ্ঞেস করেননি "আপনার পরে কে খলফা হবে?"; এমন হাদিস কেন পাওয়া যায় না।
[] হাজার হাজার অস্পষ্ট হাদিস থাকার চেয়ে ৫০০ শুদ্ধ হাদিস প্রসঙ্গ সহ থাকতে পারতো যদি সাহাবিরা ভবিষৎতের মানুষের জন্য চিন্তা করে সবাই এক হয়ে অন্তত ৫০০টি হাদিস ভালোভাবে সংগ্রহ করে রাখতো। তাহলে কি এখন মুসলিমদের এতো বিভ্রান্তিতে থাকতে হতো না।
[] মানুষকে পৃথিবীতে পাঠানোর সময় আল্লাহ কেন মানুষকে জিজ্ঞেস করলেন না "তুমি কি পৃথিবীতে যেতে চাও?", আর যদি জিজ্ঞেস করেও থাকে তাহলে তা স্মৃতি থেকে মুছে কেন ফেলেছেন?
এ সব ছাড়াও পৃথিবীতে আল্লাহ অনেক মানুষকে অনেক বড়ো বড়ো কষ্ট দিয়েছেন যেগুলো দেয়া ঠিক বলে মনে করি না।
নবি ও রসূলদের জীবনে অনেক বড়ো বড়ো কষ্ট এসেছে তবুও তারা আল্লাহর ইবাদত করতেন; তারা আল্লাহকে দোষারোপ করেননি, এ কারণে আমিও আল্লাহকে দোষারোপ করতে চাই না। এখনও ইসলাম পালন করতে চাই।
[] ইসলামের নানা বিষয় নিয়ে মতোভেদ আছে বলে ইসলামি শাসন চাইবো না এটা হতে পারে না। মতোভেদ তো বিজ্ঞানেও আছে, গণিতশাস্ত্রেও আছে... এখন কি বিজ্ঞানচর্চা বাদ দেবো?, গণিতচর্চা বাদ দেবো?
◼️ যে সকল ছেলে মেয়েরা বলতো "আমার যা মোন চায় তাই করবো", "আমার ক্ষতি হলে তোমার কী?" তাদের অনেকে ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে এখন বাধ্য হয়ে ইসলাম পালন করছে।
◼️ কেউ যদি তোমাকে আঘাত দিয়ে কিছু বলে তাহলে রাগ করা সঠিক। কিন্তু কেউ যদি তোমার ভালোর জন্য রাগ করে কিছু বলে তাহলে তুমি রাগ করবে না।
◼️ ইসলামিক জীবন আসলে কেমন? সারাদিন কি শুধু আল্লাহর ইবাদত ও ইসলাম নিয়ে গবেষণা করতে হবে? পরিবারের খোঁজ খবর নেবো না?
ইসলামিক জীবন কেমন হবে তা একজনের পরিবারের ওপরও নির্ভর করে। ধরুক কোনো এক পরিবারের বাবা মা চায় তার ছেলে বড়ো আলেম হোক, তাকে পারিবারিক কাজ কর্ম তেমন করতে হবে না, তাহলে সে পারিবারিক কাজ কর্ম তেমন না করলেও সমস্যা নেই। কিন্তু ধরুন কারো বাবা মা চায় তার সন্তান পারিবারিক কাজ কর্মও করুক তখন সে সন্তানের উচিত হবে না যে সে সারাদিন শুধু আল্লাহর ইবাদত করবে আর ইসলাম নিয়ে গবেষণা করবে। তার উচিত হবে ইসলামের ফরজ কাজ করা, পরিবারের জন্য করা এবং নিজের ভালো ক্যারিয়ারের জন্যও কাজ করা। কারো পরিবারের বাবা মা যদি নিজেই চায় তার সন্তান সারাদিন শুধু ক্যারিয়ারের জন্য পরিশ্রম করুক তাহলে ভিন্ন। কিন্তু এছাড়া একজন সন্তানের সারাদিন ক্যারিয়ার নিয়ে কাজ করা ঠিক হবে না। সুতরাং ইসলামিক জীবন অনুযায়ী সবাই বড়ো কিছু হতে পারবে না; যে যতোটা বড়ো কিছু হতে পারবে তাকে তা নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হবে।
(আমি জানি না যে আমার কথাগুলো কতোটুকু সঠিক; এটা আমার ব্যক্তিগত ধারণা।)
আমাদের যেগুলো করা উচিত :
১. নামাজ পড়া।
২. বাবা মার খোঁজ নেয়া।
৩. ভাই বোনদের খোঁজ নেয়া।
৪. আত্মীয়দের সাথে মেশা।
৫. পরিবারের মানুষদেরকে সাহায্য করা।
৬. অনেক সময় বাইরে ঘুরতে যাওয়া।
.
.
.
.
◼️ যারা তোমার ঘনিষ্ঠ ও ভালো তাদের সাথে কোনো কাজ করতে গেলে সবারটা চিন্তা করে কাজ করবে; সবার ভালোই বুঝার চেষ্টা করবে; কেবল নিজেরটা চিন্তা করে কাজ করবে না। কিন্তু যারা তোমার ঘনিষ্ঠ নয় ও খারাপ তাদের ক্ষেত্রে তুমি তোমার নিজেরটা চিন্তা করে কাজ করবে; এ ক্ষেত্রে সবার ভালোর কথা চিন্তা করে কাজ করতে গেলে তোমার ক্ষতি হতে পারে কেননা তারা খারাপ।
◼️ পৃথিবীর সুখ ও কষ্ট ক্ষণস্থায়ী।
Comments
Post a Comment