আল্লাহ একজন মানুষের আশেপাশে যা আছে তার দ্বারা অনেক সময় সে ব্যক্তিকে অনেক কিছু বোঝান। যেমন...

আল্লাহ একজন মানুষের আশেপাশে যা আছে তার দ্বারা অনেক সময় সে ব্যক্তিকে অনেক কিছু বোঝান। যেমন ধরুন আপনি প্রায়ই বাগানে ঘুরে বেড়ান, আর আল্লাহ আপনাকে স্বপ্নে গাছপালার দ্বারা কিছু বোঝালেন। অথবা ধরুন আপনি অনেক বন্ধুদের সাথে দেখা করেন আল্লাহ আপনাকে স্বপ্নে আপনার বন্ধুদের দ্বারাই কিছু বোঝালেন। আমার নিজের জীবনেই আমি এমনটা ঘটতে দেখেছি। আর কেবল আমার ক্ষেত্রে নয়, নবি রসূলদের ক্ষেত্রেও এমনটা হয় বলে মনে করি। যেমন :

◼️ নবি ইব্রাহিম (আ.) আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকতেন আর জানতে চাইতেন তার পালনকর্তা কে, এবং বাইবেলে অনেক জায়গায় আল্লাহ ইব্রাহীম (আ.)-কে আকাশের তারার দৃষ্টান্ত দিয়ে অনেক কিছু বলেছেন।

>> (কুরআন ৬:৭৬-৭৯): যখন রাত তাকে ঢেকে দিল, তখন তিনি একটি তারা দেখতে পেলেন এবং বললেন, "এটাই কি আমার প্রতিপালক?" পরে যখন তা অদৃশ্য হয়ে গেলো, তিনি বললেন, "আমি ডুবে যাওয়া জিনিসগুলোকে ভালোবাসি না।" এরপর যখন চাঁদ উদিত হতে দেখলেন, তিনি বললেন, "এটাই কি আমার প্রতিপালক?" কিন্তু যখন সেটাও অদৃশ্য হয়ে গেল, তখন তিনি বললেন, "যদি আমার প্রতিপালক আমাকে পথ প্রদর্শন না করেন, তাহলে আমি অবশ্যই পথভ্রষ্টদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবো।"এরপর যখন সূর্য উদিত হতে দেখলেন, তিনি বললেন, "এটাই কি আমার প্রতিপালক? এটি তো সবার চেয়ে বড়ো।" কিন্তু যখন সেটাও অদৃশ্য হয়ে গেল, তখন তিনি বললেন, "হে আমার সম্প্রদায়! তোমরা যা শরীক করো, নিশ্চয় আমি তা থেকে মুক্ত। আমি একনিষ্ঠভাবে সেই সত্তার দিকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছি যিনি আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন, এবং আমি মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত নই।

>> (বাইবেল, পুরাতন নিয়ম, আদিপুস্তক ১৫:৫): আল্লাহ ইব্রাহিম (আ.)-কে বাইরে নিয়ে গিয়ে বললেন, "আকাশের তারাগুলোর দিকে তাকাও, যদি গুনতে পারো তাহলে গুনে দেখো। তোমার বংশধর এমনই অসংখ্য হবে।

[] ইব্রাহিম (আ.) প্রধানত মেসোপটেমিয়া অঞ্চলে (বর্তমান ইরাকের একটি অংশ) এবং পরবর্তীতে ফিলিস্তিন ও মক্কা অঞ্চলে বসবাস করেছিলেন। মক্কা ছিল মরুভূমি অঞ্চল, যেখানে বালি ও শুষ্ক পরিবেশ বিরাজমান ছিল। ইব্রাহিম (আ.)-এর জীবনের মরুভূমির বালির দৃষ্টান্ত বাইবেলের পুরাতন নিয়মে পাওয়া যায়:

(বাইবেল, পুরাতন নিয়ম, আদিপুস্তক ২২:১৭): আমি তোমাকে মহা আশীর্বাদ দেবো এবং তোমার বংশধরদের সমুদ্রের তীরের বালি ও আকাশের তারার মতো অসংখ্য করবো।

◼️ নবি ঈসা (আ.) যে এলাকায় বাস করতেন এবং ইসলাম প্রচার করতেন, সেই অঞ্চলটি ছিলো প্রাচীন প্যালেস্টাইন, যা বর্তমানে ইসরায়েল, ফিলিস্তিন, এবং আশেপাশের অঞ্চল হিসেবে পরিচিত। এটি ভূমধ্যসাগরীয় জলবায়ুর একটি এলাকা, যেখানে গাছপালা এবং উদ্ভিদের বৈচিত্র্য ছিলো। এই অঞ্চলটি বিভিন্ন ধরনের গাছপালা এবং চাষাবাদে সমৃদ্ধ ছিলো। বাইবেলের নিউ টেস্টামেন্টে বা নতুন নিয়মের বিভিন্ন জায়গায় গাছ এবং চারার দৃষ্টান্ত দিয়ে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষার কথা বলা হয়েছে:

>> (বাইবেল, নতুন নিয়ম, মার্ক ৪: ৩-২০): তিনি গল্পের মধ্য দিয়ে অনেক বিষয় তাদের শিক্ষা দিতে লাগলেন। তার মধ্যে তিনি বললেন, "শুনুন, একজন চাষী বীজ বুনতে গেল। বীজ বুনবার সময় কতোগুলো বীজ পথের পাশে পড়লো, আর পাখীরা এসে তা খেয়ে ফেললো। আবার কতোগুলো বীজ পাথুরে জমিতে পড়লো। সেখানে বেশি মাটি ছিলো না। মাটি গভীর ছিলো না বলে তাড়াতাড়ি চারা গজিয়ে উঠল। সূর্য উঠার পর সেগুলো পুড়ে গেলো এবং শিকড় ভালো করে বসেনি বলে শুকিয়ে গেলো। আর কতোগুলো বীজ কাঁটাবনের মধ্যে পড়লো। কাঁটাগাছ বেড়ে উঠে চারাগুলো চেপে রাখলো, তাই ফল ধরলো না। কিন্তু আর কতোগুলো বীজ ভালো জমিতে পড়লো এবং গাছ বের হয়ে বেড়ে উঠলো ও ফল দিল; কোনটাতে ত্রিশ গুণ, কোনটাতে ষাট গুণ, আবার কোনটাতে একশোগুণ ফসল জন্মাল। শেষে ঈসা (আ.) বললেন, "যার শুনবার কান আছে, সে শুনুক।" ভিড় কমে গেলে পর ঈসা (আ.)-এর চারপাশের লোকেরা আর তাঁর বারোজন সাহাবী সেই গল্পের বিষয় তাঁকে জিজ্ঞাসা করলেন। ঈসা (আ.) তাঁদের বললেন, "আল্লাহর রাজ্যের গোপন সত্য তোমাদেরই জানতে দেয়া হয়েছে, কিন্তু অন্যদের কাছে গল্পের মধ্য দিয়ে সব কথা বলা হয়, যেনো পাক-কিতাবের কথামতো তারা তাকিয়েও দেখতে না পায় এবং শুনেও বুঝতে না পারে। তা না হলে তারা হয়তো আল্লাহর দিকে ফিরবে এবং ক্ষমা পাবে। তারপর ঈসা (আ.) তাঁদের বললেন, "তোমরা কি এই গল্পটার মানে বুঝলে না? তাহলে কেমন করে অন্য গল্পগুলোর মানে বুঝবে? চাষী যে বীজ বুনেছিলো তা হলো আল্লাহর কালাম। পথের পাশে পড়া বীজের মধ্য দিয়ে তাদের সম্বন্ধেই বলা হয়েছে যারা সেই কালাম শোনে, কিন্তু শয়তান তখনই এসে তাদের অন্তরে যে কালাম বোনা হয়েছিলো তা নিয়ে যায়। পাথুরে জমিতে পড়া বীজের মধ্য দিয়ে তাদের সম্বন্ধেই বলা হয়েছে যারা সেই কালাম শোনে তখনই আনন্দের সঙ্গে তা গ্রহণ করে, কিন্তু তাদের মধ্যে শিকড় ভালো করে বসে না বলে কেবল অল্প দিনের জন্য তারা স্থির থাকে। পরে কালামের জন্য যখন কষ্ট এবং জুলুম আসে তখনই তারা পিছিয়ে যায়। আবার কাঁটাবনের মধ্যে বোনা বীজের মধ্য দিয়ে তাদের সম্বন্ধেই বলা হয়েছে যারা সেই কালাম শোনে, কিন্তু সংসারের চিন্তা-ভাবনা, ধন-সম্পত্তির মায়া এবং অন্যান্য জিনিসের লোভ এসে সেই কালামকে চেপে রাখে; সেই জন্য তাতে কোনো ফল হয় না। আর ভালো জমিতে বোনা বীজের মধ্য দিয়ে তাদের সম্বন্ধে বলা হয়েছে যারা সেই কালাম শোনে এবং শক্ত করে ধরে রাখে, আর তারা অনেক ভালো ফল দেয়। কেউ দেয় ত্রিশগুণ, কেউ দেয় ষাট গুণ আবার কেউ দেয় একশো গুণ।

>> (বাইবেল, নতুন নিয়ম, মথি ৬:২৮-৩০) কাপড়-চোপড়ের জন্য কেন চিন্তা করো?ছোট্ট ছোট্ট লিলি ফুলের কথা চিন্তা করো, তারা কীভাবে বেড়ে ওঠে, তারা পরিশ্রমও করে না, সুতাও কাটে না৷ তবুও আমি তোমাদেরকে বলছি, এমন কি রাজা সোলাইমান (আ.) তার সমস্ত প্রতাপ ও গৌরবে মণ্ডিত হয়েও এদের একটার মতোও নিজেকে সাজাতে পারেননি। মাঠে যে ঘাস আজ আছে আর কাল উনুনে ফেলে দেয়া হবে, আল্লাহ তা যদি এতো সুন্দর করে সাজান, তাহলে হে অল্প বিশ্বাসীর দল তিনি তোমাদেরকে আরো কতোই না বেশি সাজাবেন।

>> (বাইবেল, নতুন নিয়ম, লূক ২৩:৩১): যদি তারা সবুজ গাছে এমন করে, তবে শুকনো গাছে কী হবে?

|| এর অর্থ হলো, ঈসা (আ.) যখন ছিলেন তখনই লোকেরা কতো নিষ্ঠুর আচরণ করেছিলো। তাই ভবিষ্যতে যখন তিনি থাকবেন না বা আল্লাহর অনুগ্রহ প্রত্যাহার করা হবে (গাছ শুকিয়ে যাওয়া), তখন আরও ভয়াবহ পরিস্থিতি আসতে পারে।

>> (বাইবেল, নতুন নিয়ম, লূক ১৭:৬): নবি ঈসা (আ.) বললেন, "তোমাদের ভেতর যদি সরিষার দানা পরিমাণ ঈমান থাকে, আর ঐ তুঁতগাছকে বলো, "তোমার শেকড় উপড়ে নিজেকে সাগরে পুঁতে রাখো" তাহলে তাই করা হবে।

>> (বাইবেল, নতুন নিয়ম, মথি ৭:১৬-১৮): তাদের জীবনের ফল দেখেই তোমরা তাদের চিনতে পারবে৷ কেউ কি কাঁটাঝোপের মধ্যে থেকে দ্রাক্ষা বা শিয়ালকাঁটার ভেতর থেকে ডুমুর পেতে পারে? ঠিক সেইভাবে প্রত্যেক ভালো গাছে ভালো ফলই ধরে, কিন্তু খারাপ গাছে খারাপ ফলই ধরে৷ ভালো গাছে খারাপ ফল এবং খারাপ গাছে ভালো ফল ধরতে পারে না৷

||এটি মানুষের কর্মের মাধ্যমে তাদের প্রকৃতি বোঝানোর শিক্ষা দেয়।

>> (বাইবেল, নতুন নিয়ম, মথি ১৩:৩১-৩২): আর একটি উপমা তাদের বললেন, "আল্লাহর রাজ্য সরিষার দানার মতো, যা একজন নিয়ে গেলো এবং তার ক্ষেতের মধ্যে বপন করলো। তা সকল বীজ অপেক্ষা ছোটো, কিন্তু যখন তা বেড়ে উঠলো, তখন তা সমস্ত শাক-সবজির মধ্যে বড়ো; একটা বড়ো গাছ হয় ওঠে, পাখিরা এসে তার ডালপালায় বাসা বাঁধে।"

|| এটি আল্লাহর রাজ্যের বৃদ্ধি এবং প্রভাবের ব্যাখ্যা করার জন্য ব্যবহৃত একটি উপমা।

(বাইবেল, নতুন নিয়ম, যোহন ১৫: ১-১০): আমিই আসল আংগুর গাছ আর আমার পিতা হলেন মালী। আমার যে সব ডালে ফল ধরে না সেগুলো তিনি কেটে ফেলেন, আর যে সব ডালে ফল ধরে সেগুলো তিনি ছেঁটে পরিষ্কার করেন যেন আরও অনেক ফল ধরতে পারে। আমি যে কথা তোমাদের বলেছি তার জন্য তোমরা আগেই পরিষ্কার হয়েছো। আমার মধ্যে থাকো আর আমিও তোমাদের অন্তরে থাকবো। আংগুর গাছে যুক্ত না থাকলে যেমন ডাল নিজে নিজে ফল ধরাতে পারে না তেমনি আমার মধ্যে না থাকলে তোমরাও নিজে নিজে ফল ধরাতে পারো না। আমিই আংগুর গাছ, আর তোমরা তার ডালপালা। যদি কেউ আমার মধ্যে থাকে এবং আমি তার মধ্যে থাকি তাহলে তার জীবনে অনেক ফল ধরে, কারণ আমাকে ছাড়া তোমরা কিছুই করতে পারো না। যদি কেউ আমার মধ্যে না থাকে তাহলে কাটা ডালের মতোই তাকে বাইরে ফেলে দেয়া হবে আর তা শুকিয়ে যাবে। তখন সেই ডালগুলো কুড়িয়ে আগুনে ফেলে দেয়া হবে এবং সেগুলো পুড়ে যাবে। যদি তোমরা আমার মধ্যে থাকো আর আমার কথাগুলো তোমাদের অন্তরে থাকে তাহলে তোমাদের যা ইচ্ছা তা-ই চেয়ো; তোমাদের জন্য তা করা হবে। যদি তোমাদের জীবনে প্রচুর ফল ধরে এবং এইভাবে তোমরা নিজেদের আমার সাহাবী বলে প্রমাণ করো তাহলে আমার পিতার প্রশংসা হবে। পিতা যেমন আমাকে ভালোবেসেছেন আমিও তেমনি তোমাদের ভালোবেসেছি। আমার ভালোবাসার ভেতর থাকো। আমি আমার পিতার সমস্ত হুকুম পালন করে যেমন তাঁর ভালোবাসার মধ্যে রয়েছি, তেমনি তোমরাও যদি আমার হুকুম পালন করো তাহলে তোমরাও আমার ভালোবাসার মধ্যে থাকবে।

 >> (বাইবেল-নতুন নিয়ম- মথি ২১:৩৩-৪১, বাইবেল-নতুন নিয়ম- মার্ক ১২:১-৯, এবং বাইবেলে-নতুন নিয়ম- লূক ২০:৯-১৬): আর একটা দৃষ্টান্ত দিই, শুনুন। একজন গৃহকর্তা একটি আঙুর ক্ষেত করে তার চারদিকে বেড়া দিলেন। পরে সেই ক্ষেতের মধ্যে আঙুর-রস করার জন্য গর্ত খুঁড়লেন এবং একটা উঁচু পাহারা-ঘর তৈরি করলেন। এর পরে তিনি কয়েকজন চাষীর কাছে সেই আঙুর ক্ষেতটা ইজারা দিয়ে বিদেশে চলে গেলেন। যখন ফল পাকার সময় হয়ে আসলো তখন তিনি সেই ফলের ভাগ নিয়ে আসার জন্য তাঁর গোলামদের সেই চাষীদের কাছে পাঠিয়ে দিলেন। চাষীরা তাঁর গোলামদের একজনকে ধরে মারলো, একজনকে খুন করলো এবং অন্য আর একজনকে পাথর মারলো। এরপর তিনি প্রথম বারের চেয়ে আরও বেশি গোলাম পাঠিয়ে দিলেন, কিন্তু চাষীরা সেই গোলামদের সঙ্গে একই রকমের ব্যবহার করলো। আঙুর ক্ষেতের মালিক শেষে নিজের ছেলেকেই তাদের কাছে পাঠালেন। তিনি ভাবলেন, তারা অন্তত তাঁর ছেলেকে সম্মান করবে। কিন্তু সেই চাষীরা ছেলেকে দেখে নিজেদের মধ্যে বলাবলি করলো, "এই পরে সম্পত্তির মালিক হবে। চলো, আমরা ওকেও মেরে ফেলি, তাতে আমরাই সম্পত্তির মালিক হবো।" এই বলে তারা সেই ছেলেকে ধরে আঙুর ক্ষেত থেকে বাইরে নিয়ে গিয়ে মেরে ফেললো। তাহলে বলুন দেখি, আঙুর ক্ষেতের মালিক যখন নিজে আসবেন তখন তিনি সেই চাষীদের কি করবেন?" সেই ধর্ম-নেতারা ঈসা (আ.)-কে বললেন, "তিনি সেই দুষ্ট লোকদের একেবারে ধ্বংস করবেন এবং যে চাষীরা তাঁকে সময় মতো ফলের ভাগ দেবে তাদের কাছেই সেই আঙুর ক্ষেতটা ইজারা দেবেন।"

||এই গল্পের মাধ্যমে ঈসা (আ.) আল্লাহ এবং ইস্রায়েল জাতির প্রতি আল্লাহর পরিকল্পনা বোঝানোর চেষ্টা করেছিলেন।

>> (বাইবেল, নতুন নিয়ম, লূক ১৩:৬-৯): এরপর ঈসা (আ.) তাদের এই দৃষ্টান্তটি বললেন, "একজন লোক তার বাগানে একটি ডুমুর গাছ পুঁতেছিলো৷ পরে সে এসে সেই গাছে ফল হয়েছে কি না খোঁজ করলো, কিন্তু কোন ফল দেখতে পেল না৷ তখন সে বাগানের মালীকে বললো, "দেখো, আজ তিন বছর ধরে এই ডুমুর গাছে ফলের খোঁজে আমি আসছি, কিন্তু আমি এতে কোনো ফলই দেখতে পাচ্ছি না, তাই তুমি এই গাছটা কেটে ফেলো, এটা অযথা জমি নষ্ট করবে কেন?" মালী তখন বলল, "হুজুর, এ বছরটা দেখতে দিন৷ আমি এর চারপাশে খুঁড়ে সার দেবো৷ সামনের বছর যদি এতে ফল আসে তো ভালোই! তা না হলে আপনি ওটাকে কেটে ফেলবেন৷

|| এই দৃষ্টান্তটি মানুষের জীবনে প্রার্থিত ফল উৎপাদনের গুরুত্ব বোঝায়।

⚫ এছাড়াও বাইবেলে মেষের (ভেড়া) নানা দৃষ্টান্ত আছে।

হাদিসে নবীদের মেষ পালনের কথা :

(Sahih al-Bukhari 3406): Narrated Jabir bin Abdullah:
We were with Allah's Messenger (ﷺ) picking the fruits of the 'Arak trees, and Allah's Messenger (ﷺ) said, "Pick the black fruit, for it is the best." The companions asked, "Were you a shepherd?" He replied, "There was no prophet who was not a shepherd."

(সহিহ আল বুখারী: ৩৪০৬): জাবির ইবনু আবদুল্লাহ (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, আমরা আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর সঙ্গে কাবাস (পিলু) গাছের পাকা ফল বেছে বেছে নিচ্ছিলাম। আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এর মধ্যে কালোগুলো নেয়াই তোমাদের উচিত। কেননা এগুলোই অধিক সুস্বাদু। সাহাবীগণ বললেন, আপনি কি মেষ চরিয়েছিলেন? তিনি বললেন, প্রত্যেক নবিই তা চরিয়েছেন। (আধুনিক প্রকাশনী: ৩১৫৫, ইসলামিক ফাউন্ডেশন: ৩১৬৪)

(Sahih al-Bukhari 2262): Narrated Abu Huraira:
The Prophet (ﷺ) said, "Allah did not send any prophet but shepherded sheep." His companions asked him, "Did you do the same?" The Prophet (ﷺ) replied, "Yes, I used to shepherd the sheep of the people of Mecca for some Qirats."

(সহিহ আল বুখারী: ২২৬২): আবূ হুরাইরাহ্ (রা.) হতে বর্ণিত যে, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, "আল্লাহ তা'আলা এমন কোন নবি প্রেরণ করেননি, যিনি মেষ না চরিয়েছেন। তখন তাঁর সাহাবীগণ বলেন, আপনিও? তিনি বলেন, হ্যাঁ; আমি কয়েক কীরাতের (মুদ্রা) বিনিময়ে মক্কা্বাসীদের মেষ চরাতাম। (আধুনিক প্রকাশনী: ২১০২, ইসলামিক ফাউন্ডেশন: ২১১৯)

|| এই দুই হাদিস থেকে বোঝা যায়, নবিরা জীবনের এক পর্যায়ে মেষ পালন করতেন, যা তাদের বিনয়, ধৈর্য ও দায়িত্বশীলতা শেখার একটি মাধ্যম ছিলো। যদিও নবি ঈসা (আ.)-এর জীবনে সরাসরি মেষ পালনের কথা জানা যায় না, তবে নবিদের জীবনের এই সাধারণ বৈশিষ্ট্য তাঁর জীবনেও থাকতে পারে বলে মনে করা হয়।

(বাইবেল, নতুন নিয়ম, যোহন ১০: ১৪-১৫): আমিই উত্তম মেষপালক৷ আমি আমার মেষদের জানি আর আমার মেষরা আমায় জানে৷ ঠিক যেমন আমার পিতা আমাকে জানেন, আমিও আমার পিতাকে জানি; আর আমি মেষদের জন্য আমার জীবন সঁপে দিই৷

(বাইবেল, নতুন নিয়ম, মথি ৯:৩৬): লোকদের ভীড় দেখে তাদের জন্য ঈসা (আ.) মমতা হলো, কারণ তারা পালকবিহীন মেষপালের মতো ক্লান্ত ও অসহায় ছিলো৷

(বাইবেল, নতুন নিয়ম, মার্ক ৬:৩৪): ঈসা (আ.) নৌকা থেকে বাইরে বেরিয়ে বহু লোককে দেখতে পেলেন, তাঁর প্রাণে তাদের জন্য খুবই দয়া হলো, কারণ তাদের পালকহীন মেষপালের মতো দেখাচ্ছিলো৷ তখন তিনি তাদের অনেক বিষয়ে শিক্ষা দিতে লাগলেন৷

◼️ মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর জন্মস্থান মক্কা ছিলো একটি শুষ্ক ও পাহাড়ি অঞ্চল। মক্কা নগরী আরব উপদ্বীপের একটি মরুপ্রধান এলাকায় অবস্থিত, যেখানে পাথুরে ভূমি এবং পাহাড় ছিলো প্রচুর। শহরটির চারপাশে পাথুরে পাহাড় ও শুকনো উপত্যকা পরিবেষ্টিত।

(কুরআন ২:৭৪): এরপর তোমাদের অন্তর কঠিন হয়ে গেলো, তা পাথরের মতো, বরং তার চেয়েও বেশি কঠিন। কেননা, পাথরের মধ্যে এমনও রয়েছে, যা থেকে ঝর্ণা উৎসারিত হয়। আর কিছু পাথর ফেটে যায় এবং তার মধ্য থেকে পানি প্রবাহিত হয়। আবার কিছু পাথর আল্লাহর ভয়ে ভেঙে পড়ে। আর তোমরা যা করো, আল্লাহ সে সম্পর্কে বেখবর নন।

আল্লাহ এ আয়াতে পাথরের দৃষ্টান্ত দিচ্ছেন। আর মক্কায় পাথুরে ভূমি এবং পাহাড় ছিলো প্রচুর।

Comments

Popular posts from this blog

অলৌকিক ঘটনা কি কেবল নবি রসূলদের সাথেই ঘটে?

ইসলামে চুরির শাস্তি

দার্শনিক নানা বিষয় একত্রে :