ইসলামে জন্য
ইসলামে জন্য: — আহসানুল ইরফান
بِسْمِ اللّٰهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيمِ-
পরম করুণাময় ও অতি দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি।
⚫ আমি মনে করি আল্লাহ এমনভাবে করেন যাতে করে অনেকে সন্দেহ করে আবার অনেকে বিশ্বাসও করে:
আমি মনে করি, আল্লাহ এমনভাবে করেন যাতে করে অনেকে সন্দেহ করে আবার অনেকে বিশ্বাসও করে। যেমন—
পৃথিবীতে সুখ আছে যেটার জন্য মানুষ আল্লাহ তায়ালায় বিশ্বাস করে। আবার, কষ্ট আছে, যেটার জন্য অনেকে আল্লাহকে সন্দেহ করে।
পৃথিবীতে বিশৃঙ্খলা আছে যেটার জন্য অনেকে আল্লাহ তায়ালায় সন্দেহ করে।
আবার, পৃথিবীতে সৌন্দর্য আছে যেটার জন্য অনেকে আল্লাহ তায়ালায় বিশ্বাস করে।
হয় আল্লাহ তায়ালাকে কেউ বানাননি, অথবা প্রকৃতিকে কেউ বানায়নি —যেকোনো একটি হবে। আর আমি মনে করি, আল্লাহ তায়ালাকে কেউ বানায়নি এমন হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
আল্লাহ নবি রসূলদেরকে "স্বপ্নে" অনেককিছু দেখান। ফলে অনেকে সন্দেহ করবে, কিন্তু অনেকে আবার বিশ্বাসও করবে।
⚫ যেকোনো কিছু অতিরিক্ততা সমস্যাজনক:
"অতিরিক্ত" ও "বেশি" দুটি ভিন্ন।
পৃথিবীতে সুখ আছে, কষ্ট আছে, ভুল আছে, সঠিক আছে, রাত আছে, দিন আছে... এ সব কিছুই প্রয়োজন, কিন্তু এগুলোর ভেতর ভারসাম্যতা ঠিক রাখা দরকার। কোনো কিছু নিয়েই বাড়াবাড়ি করা ঠিক নয়। আলোচনা করার প্রয়োজন আছে, কিন্তু সেক্ষেত্রেও চিন্তার সীমালঙ্ঘনে আমি বিশ্বাস করি, আমি নাস্তিকদের তথাকথিত মুক্ত চিন্তায় বিশ্বাসী নই। মানুষ ভুল করবে এটা ঠিক, তাই বলে আমি উদারপন্থী নই, দোষ ধরারও প্রয়োজন আছে। মতোভেদের শেষ নেই এটা ঠিক, তবুও আলোচনা করার প্রয়োজন আছে; যদি আমরা চিন্তা না করতাম, বিশ্লেষণ না করতাম তাহলে কম্পিউটার আবিষ্কার হতো না, মোবাইল ফোন আবিষ্কার হতো না, তাই চিন্তা বিশ্লেষণ করা প্রয়োজন।
জানার প্রয়োজনীতা, দোষ ধরার প্রয়োজনতা, কঠোর হওয়ার প্রয়োজনীয়তা, চিন্তা করার প্রয়োজনীয়তা, ক্ষমা করার প্রয়োজনীয়তা, এ সবগুলোই প্রয়োজন। আর এগুলোর ভেতর ভারসাম্যতা ঠিক রাখা দরকার। জানার ক্ষেত্রেও সব জানার প্রয়োজন নেই, যতোটুকু জানা প্রয়োজন ততোটুকু জানলেই অনেক।
(চিন্তার সীমালঙ্ঘনের কিছু উদাহরণ হলো: আল্লাহকে যুক্তি দেবো এমন চিন্তা করা, আমি যদি আল্লাহ হতাম এমন চিন্তা করা এবং এমন ইত্যাদি।)
⚫ কীভাবে ভুল হয়:
বিজ্ঞান ও দর্শনে একটি কথা আছে "তত্ত্ব কখনো ভুল হয় না, তত্ত্বের সীমাবদ্ধতা থাকে"। এ কথা কেন বলা হয়? কারণ প্রত্যেক জিনিসের সাথে অন্য প্রত্যেক জিনিসের নির্দিষ্ট পরিমাণ মিল ও নির্দিষ্ট পরিমাণ অমিল আছে। মিল থেকে আমরা একই শ্রেণীর অন্তর্ভুক্ত করি, আর অমিল থেকে আমরা পার্থক্য করি।
যেমন: আমি আছি, আল্লাহও আছেন। এটা আমার আর তার মাঝের কিছু মিল। কিন্তু আমি যেভাবে আছি, আর তিনি যেভাবে আছেন দুটা এক নয়, এটা আমাদের মাঝের অমিল। কেউ বলতে পারে ফোন বক্সের মতো, কথাটা ভুল নয়, কিন্তু কথাটা পুরোপুরি সঠিকও নয়, আবার কেউ বলতে পারে ফোন ক্যালকুলেটরের মতো একথাটাও ভুল নয়, কিন্তু পুরোপুরিভাবে সঠিকও নয়। কারণ যেটা যেইটা, সেটা তো সেটাই। একটি জিনিস একই সাথে অন্য আরেকটি জিনিস হতে পারে না। কলম রকই সাথে পেন্সিল হতে পারে না, থাকা একই সাথে না-থাকা হতে পারে না...
যেহেতু প্রত্যেক জিনিসের সাথে অন্য প্রত্যেক জিনিসের মিল আছে তাই আমরা নানা ভুল করি এবং নানা ক্ষেত্রে সমাধানও করি, আবার প্রত্যেক জিনিসের সাথে অন্য প্রত্যেক জিনিসের অমিল আছে তাই আমরা পার্থক্যও করি।
⚫ ন্যায়নিষ্ঠতা:
কেউ মনে করে, এ অন্যায়ের জন্য ১০০ ঘাত চাবুক মারা উচিত। আবার কেউ মনে করে, এ অন্যায়ের জন্য ২০০ ঘাত চাবুক মারা উচিত। আবার কেউ মনে করে, আমি নিজে জীবনে কতো ভুল কতেছি, তাই তাকে ক্ষমা করা উচিত।
আমরা সব দেখি না, আল্লাহ সব দেখেন তাই আল্লাহই ভালো জানেন কোনটি সঠিক আর কোনটি ভুল।
কারো কাছে বিয়ে করাও পাপ মনে হতে পারে। কারো কাছে সিগারেট খাওয়া পাপ নাও মনে হতে পারে, কিন্তু চুরি করা পাপ মনে হতে পারে।
আমরা সব দেখি না, সামনে তাকালে পেছনে দেখতে পারি না। আল্লাহ সব দেখেন তাই আল্লাহই ভালো জানেন কোনটি সঠিক আর কোনটি বেঠিক।
⚫ বিজ্ঞানের মতামত পরিবর্তন হয় এবং বিজ্ঞানও অনেক কিছু ব্যাখ্যা করতে পারবে না:
এক সময় ধরা হতো সূর্য পৃথিবীর চারদিকে ঘোরে, পরে জানো গেলো "নাহ, পৃথিবী সূর্যের চারদিকে ঘোরে, পরে জানা গেলো সূর্যও তার নিজ কক্ষপথে ঘোরে। বিজ্ঞানও পরিবর্তন হয়। আর বিজ্ঞানও অনেককিছু ব্যাখ্যা করতে পারবে না। যেমন: স্পেস বা স্থান কীভাবে সৃষ্টি হলো।
আল্লাহ সব দেখেন, আল্লাহই ভালো জানেন কোনটি সঠিক।
⚫ আমার জীবনের আশ্চর্যজনক কিছু ঘটনা:
আগে ধর্ম নিয়ে আমার অনেক সন্দেহ হতো কিন্তু আমি আমার নিজের জীবনেই আশ্চর্যজনক নানা ঘটনা ঘটতে দেখেছি। আমার সাথে এমন অনেকবার হয়েছে যে আমি বিপদে পড়লাম, যখন রক্ষা পেলাম ঠিক ওসময়ই আজান হচ্ছে, শুধু একবার নয়, আমার সাথে অনেকবার এমন হয়েছে। আবার আমি স্বপ্নে কিছু দেখলাম, পরে দেখি বাস্তবেও ওরকম হলো; এমনও অনেকবার হয়েছে।
__________________________________________________
বেশিরভাগ যে সকল বিজ্ঞানী ও দার্শনিকরা হেদায়াত পায় না সম্ভাবত তাদের না পাওয়ার কারণ এটা যে তারা তাদের এন্যালেটিক্যাল মেধা ও জ্ঞানকে প্রধান্য দেয়, সুন্দর পবিত্র অন্তরকে নয়, যেখানে হেদায়াত পাওয়ার ক্ষেত্রে সুন্দর পবিত্র অন্তর বেশি ভূমিকা রাখে। সাধারণত এটা প্রকৃত মুসলিমরা সহজেই ধরতে পারে, কিন্তু ওসকল বিজ্ঞানী ও দার্শনিকরা অনেক জ্ঞানী ও মেধাবী হয়েও ধরতে পারে না।
(লেখায় সীমাবদ্ধতা থাকতেই পারে।)
Comments
Post a Comment