মুহাম্মদ (সা.)-কে কি এই প্রশ্ন করা হয়েছিলো?

(আমার ইসলামি জ্ঞান সীমিত। তাই আমার উত্তরে কিছু ভুল থাকলে আমি ক্ষমাপ্রার্থী। — আহসানুল ইরফান)

<?> ধর্ম নিয়ে কিছু প্রশ্ন আমাদের অনেকের মোনেই ছোটবেলা থেকে ঘোরাফেরা করে— এমনকি আজ থেকে ১৪০০ বছর আগেও ধর্মপ্রাণ মানুষের মনে এই প্রশ্নগুলো আসতে পারতো।

যেমন— ইহুদি, খ্রিস্টান, মুসলমান; প্রত্যেকের কাছেই তো নিজের ধর্মই সঠিক মনে হয়। তাহলে, শুধুমাত্র ভিন্ন ধর্মে জন্ম নেয়ার কারণে কীভাবে তারা "অন্তকালের" জন্য জাহান্নামে থাকা ন্যায়সঙ্গত?। এখন, আসল প্রশ্ন হলো, মুহাম্মদ (ﷺ) কি এধরণের কোনো প্রশ্ন আল্লাহ তায়ালাকে অথবা ফেরেশতা জিবরাইল (عَلَيْهِ ٱلسَّلَامُ)-কে কখনো করেছিলেন? এবং কেন করেননি?


= ধরুন, আজকে আমি একটি চিন্তা করলাম, পরে দেখলাম, আমার চিন্তাটি ভুল, বরং আল্লাহর সীদ্ধান্তটাই সঠিক। তার কিছুদিন পর আবার আমি একটি চিন্তা করলাম, কিন্তু পরে দেখলাম আমার চিন্তাটি ভুল, বরং আল্লাহর সীদ্ধান্তটাই সঠিক। তখন আমি ধরে নেবো, যেহেতু আল্লাহর সীদ্ধান্তগুলোই সঠিক হয়, তাহলে আল্লাহর বাকি সীদ্ধান্তগুলোও সঠিক হবে। আমি বলছি না যে মুহাম্মদ (ﷺ) কোনো ভুল চিন্তা করেছিলেন, আমি এটি কেবল উদাহরণ হিসেবে বলছি। নবি (ﷺ)-এর ওপর ওহি নাজিল হতো তাই তার ঈমানের জায়গাটি ছিলো অনেক দৃঢ়, হতে পারে তিনি একারণে আল্লাহকে অথবা জিবরাইল (عَلَيْهِ ٱلسَّلَامُ)-কে জিজ্ঞেস করেননি৷ আবার আরেকটি কারণ হতে পারে, নবীজি হয়তো আল্লাহর দ্বারা আগে থেকেই এ প্রশ্নগুলোর উত্তর বুঝে গিয়েছিলেন, তাই তাঁর এ প্রশ্ন করার প্রয়োজন হয়নি।


> সাহাবীরা কি কখনো মুহাম্মদ (ﷺ)-কে এমন প্রশ্ন করেছিলেন?

= মুহাম্মদ (ﷺ)-কে সাহাবিরা বিভিন্ন সময় নানা প্রশ্ন করতেন এবং তিনি সেগুলোর উত্তর দিতেন, কিন্তু সব প্রশ্ন ও উত্তর হাদিস আকারে সংরক্ষিত হয়নি। সব কিছু কেউ লিখে রাখেননি, আর সবই যে মুখস্থ ছিলো—তা-ও নয়। ইসলামী বিশ্বাস অনুযায়ী, হাদিসের যে অংশ নির্ভরযোগ্যভাবে সংরক্ষিত হয়েছে, তা-ই আল্লাহর পক্ষ থেকে হেফাজতে রাখা জ্ঞান, এবং আমাদের জন্য সেটুকুই যথেষ্ট।


সাহাবিরা মুহাম্মদ (ﷺ)-কে অনেক জটিল প্রশ্নও করেছেন:


যেমন—


যারা পাগল বা শিশু, তারা পরকালে কীভাবে বিচার পাবে? কিংবা এর কাছাকাছি ধরনের প্রশ্ন।

রাসূল (ﷺ) বলেছেন, "তিন প্রকার লোকের থেকে কলম (অর্থাৎ হিসাব ও দায়িত্ব) উঠিয়ে নেয়া হয়েছে, 

১. ঘুমন্ত ব্যক্তি, যতোক্ষণ না সে জেগে ওঠে। 

২. শিশু, যতোক্ষণ না সে বয়ঃসন্ধি লাভ করে। এবং 

৩. পাগল, যতোক্ষণ না সে সুস্থ হয়।"

— (সুনান আবু দাউদ, হাদিস নম্বর: ৪৪০৩)


কেউ জিজ্ঞেস করলো, "হে আল্লাহর রাসূল! যারা কোনো নবি'র কথা শুনেনি, যেমন পাগল, শিশু, বৃদ্ধ, তাদের কী হবে?"

নবি (ﷺ) বললেন, "কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাদের জন্য একজন রসূল পাঠাবেন। তারা যদি মানে, তারা মুক্ত; না মানলে ধ্বংস হবে।" — (মুসনাদ আহমদ)


সাহাবিরা বললেন, "আল্লাহ তো রহিম, তাহলে কেন তিনি জাহান্নাম সৃষ্টি করলেন?"

উত্তরে, "আমার আযাব, আমি যাকে ইচ্ছা তা দিয়ে শাস্তি দিই; কিন্তু আমার রহমত সব কিছুকে ছাপিয়ে গেছে।"— (কুরআন, ৭:১৫৬)


সাহাবিরা জিজ্ঞেস করলেন, "ছোট শিশু যদি মারা যায়, সে কি জান্নাতে যাবে?"

নবি (ﷺ) বললেন, "হ্যাঁ, তারা জান্নাতের পাখিদের মতো উড়ে বেড়ায়।" — (সহীহ মুসলিম, হাদিস নম্বর: ২৬৩৫)


একজন জিজ্ঞেস করলো, "হে আল্লাহর রাসূল! জান্নাতিরা কি সন্তান জন্ম দেবে?”

রাসূলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, "হ্যাঁ, সন্তান জন্ম নেবে। তবে সেই সন্তান কোনো কষ্ট করবে না (অর্থাৎ প্রসব যন্ত্রণা বা লালন-পালন প্রয়োজন হবে না), বরং সে এক মুহূর্তেই পূর্ণ বয়সের তরুণ হয়ে যাবে।" — (মুসলাদ আহমাদ, হাদিস নম্বর: ১৬২৪৫)


"তোমার প্রভুর পক্ষ থেকে আমাদের বলো—এই রূহ (আত্মা) কী?" — (কুরআন, ১৭:৮৫)

উত্তরে, "রূহ আমার প্রভুর আদেশের বিষয়, আর তোমাদেরকে খুব সামান্য জ্ঞানই দেয়া হয়েছে।" — (কুরআন, ১৭:৮৫)


একজন প্রশ্ন করলো, "দোয়া কি নিয়তিকে বদলায়, নাকি সবই নির্ধারিত?"

রাসূল (ﷺ)-এর জবাব, "দোয়া কাদারকে ঠেকিয়ে দেয়, তা নাযিল হওয়ার আগেই।" — (তিরমিযী, হাদিস নম্বর: ২১৩৯)


"আল্লাহ যাকে ইচ্ছা হিদায়াত দেন, আবার যাকে ইচ্ছা গোমরাহ করেন—তাহলে গোমরাহদের দোষ কী?"

উত্তরে, "আল্লাহ গোমরাহ করেন সেইসব লোকদের, যারা নিজেই সত্য প্রত্যাখ্যান করে।"

(কুরআন, ২:২৬)


>> মুহাম্মদ (ﷺ) অনেকেই অনেক জটিল প্রশ্ন করেছেন, কিন্তু সব প্রশ্ন ও উত্তর আমরা কুরআন ও হাদিস থেকে পাই না। আর অনেক জটিল চিন্তা মানুষ অতীতে করতোও নাহ, যেমন একটি উদাহরণ দিই; "কী যে বুঝি না, সেটাও বুঝি না" এ ধরনের কথা আজ থেকে ৪-৫ বছর আগে অনেক হাস্যকর ছিলো কারণ তখন তা নতুন ছিলো, কন্তু এখন এ ধরনের চিন্তা সাধারণ এবং তেমন হাস্যকর নয়। ওপরে (একেবারে ওপরে) যে জটিল প্রশ্ন ("যেমন"-এর যে প্রশ্ন) "যেভাবে" করা হয়েছে সেভাবে আজ থেকে ১৪০০ বছর আগে কেউ চিন্তা করেছে নাকি জানি না।


"আর তোমার রব কারো ওপর বিন্দুমাত্র জুলুম করেন না।"

— (কুরআন, ১৮:৪৯)


"আল্লাহ কাউকে তার সাধ্যের বাইরে দায়িত্ব (বোঝা) দেন না।" (কুরআন, ২:২৮৬)

Comments

Popular posts from this blog

অলৌকিক ঘটনা কি কেবল নবি রসূলদের সাথেই ঘটে?

ইসলামে চুরির শাস্তি

দার্শনিক নানা বিষয় একত্রে :