ইসলাম বনাম অজ্ঞেয়বাদ

ইসলাম বনাম অজ্ঞেয়বাদ: — আহসানুল ইরফান 


<?> পৃথিবীতে কোটি কোটি বই আছে, তার ভেতর কুরআন কেবল ১টি; সবাই তো কুরআনও পড়েনি। পৃথিবীতে বিভিন্ন ধর্মের মানুষ আছে, কে জানে কার ধর্ম সঠিক, সবাই তো আর বিচার-বিশ্লেষণ করতে পারবে না, সবাই তো আর দার্শনিকও নয়, সবাই বিজ্ঞানীও নয়, সবাই আলেমও নয়, আলেমদের মধ্যেও মতোভেদ আছে, বিজ্ঞানেও মতোভেদ আছে। তাহলে কি অজ্ঞেয়বাদই সঠিক নয়? আমরা কি ইসলামে বিশ্বাস না করে বরং বলতে পারি না "আমি জানি না সত্য কোনটি?"? 


= যারা বুঝতে পারছে না তাদের জন্য "আমি জানি না" এটা সৎ উত্তর হতে পারে, কিন্তু একজন মুসলিমের জন্য এটা বলা সৎ উত্তর হবে না।


ইসলামে যৌক্তিকতা, বিশ্বাস, ফলাফল, নির্ভরযোগ্য সূত্র এসবগুলো গুরুত্ব পায়। সবগুলোই গুরুত্ব পায় তার অর্থ এ নয় যে একজনকে সবই জানতে হবে। কিছু বিষয় যুক্তি দিয়ে বুঝতে হবে, কিছু বিষয় বিশ্বাসের ওপর ছেড়ে দিতে হবে, কিছু বিষয় ফলাফল অনুযায়ী বুঝতে হবে, আবার কিছু জিনিস নির্ভরযোগ্য সূত্র অনুযায়ী বুঝতে হবে। তার মানে এও নয় যে প্রত্যেকেই সবদিক থেকে বিবেচনা করবে। আর ইসলামে "বিশ্বাস" অন্যান্য সবকিছু থেকে বেশি গুরুত্ব পায়:


[] পৃথিবীতে কোটি কোটি বই আছে, সব আপনাকে পড়ে দেখতে হবে এমন নয়, আবার আপনি একেবারে বিচার-বিশ্লেষণ করবেন না এমনও নয়। সবাইকে বিজ্ঞানী, দার্শনিক হতে হবে না। কিন্তু সবাইকে তার জায়গা থেকে সত্যের সন্ধান করতে হবে।


"যদি তোমরা না জানো, তবে জ্ঞানীদেরকে জিজ্ঞেস করো" (সূরা নাহল ১৬:৪৩)


"জ্ঞান অর্জন করা প্রতিটি মুসলিমের ওপর ফরজ।"

— (ইবনে মাজাহ: হাদীস ২২৪)


[] ইসলামে বিশ্বাসের জায়গাটি অনেক গুরুত্ব পায়:


> সূরা আল-আসর (১০৩:১-৩)


> إِنَّ ٱلۡإِنسَٰنَ لَفِي خُسۡرٍ. إِلَّا ٱلَّذِينَ آمَنُواْ وَعَمِلُواْ ٱلصَّٰلِحَٰتِ...


অর্থ: মানুষ অবশ্যই ক্ষতির মধ্যে আছে, তবে তারা নয় যারা ঈমান এনেছে ও সৎকর্ম করেছে...


কিছু বিষয় আপনাকে বিশ্বাস করে নিতে হবে, যেমন— আল্লাহর বিচার ন্যায়নিষ্ঠ, তিনি কারো ওপর বিন্দু মাত্র জুলুম করেন না, "অমুসলিমরা জাহান্নামে যাওয়ার প্রাপ্য"...


(সূরা আন্-নিসা (৪:৪০)


নিশ্চয়ই আল্লাহ বিন্দুমাত্রও (এক কণার সমানও) জুলুম করেন না।)


[] কিছু বিষয় আপনাকে নির্ভরযোগ্য সুত্র অনুযায়ী বুঝতে হবে:


((মুহাম্মদ (সা.) এর ওপর যদি ওহি না আসতো, তাহলে তিনি সম্ভবত একজন বিখ্যাত বক্তা বা সমাজসেবক হতেন, কিন্তু তাঁর প্রভাব আজ থেকে ১৪০০ বছর ধরে এতো "গভীর" ও "বিশ্বব্যাপী" হতো না।))


> "মানুষ সৃষ্টি হয়েছে মাটির এক ফোঁটা তরল থেকে। তারপর সে গর্ভাশয়ে আঠালো পেশিতে পরিণত হয়েছে।"

(সূরা আল-মুমিনুন, আয়াত ১২-১৪)

এটি আধুনিক জীববিজ্ঞানে বর্ণিত গর্ভাবস্থার ধাপ ও মানব ভ্রূণের বিকাশের সঙ্গে মিলে যায়।


> "সমুদ্রের দুটি জল মিলিত হয়, কিন্তু তারা মিশে না।"

(সূরা ফুরকান, আয়াত ৫৩)

এটি লবণাক্ত এবং মিষ্টি জলের মধ্যে একটি পৃথক স্তরের ধারণার সাথে মিলে। 


> "তিনি রাত ও দিন সৃষ্টি করেছেন এবং সূর্য ও চাঁদকে নিয়ন্ত্রণ করেন, প্রত্যেকটি একটি নির্দিষ্ট পথ অনুসরণ করে।"

(সূরা যাসিন, আয়াত ৩৮-৪)

আধুনিক বিজ্ঞান অনুযায়ী পৃথিবী গোলাকার এবং নির্দিষ্ট কক্ষপথে ঘুরছে।

.

.

.


[] ফলাফল তুলনা: অজ্ঞেয়বাদের ফলাফলের সাথে ইসলামের ফলাফলের তুলনা করা হোক (সংক্ষেপে) :


> ইসলাম মানুষকে জীবনের একটি পরিষ্কার (relatively) লক্ষ্য দেখায় — যাতে সে এই দুনিয়াতেও সৎ ও ন্যায়ভিত্তিক জীবন কাটায়, আর পরকালেও তার উপযুক্ত ফল পায়।


> অজ্ঞেয়বাদে মানুষ জীবন ও পরকালের বিষয়ে নিশ্চিত কোনো বিশ্বাস না থাকায় জীবনের পথ অনির্দিষ্ট ও লক্ষ্যহীন মনে হয়, ফলে মনে স্থিরতা ও আত্মিক শান্তি কমে যায়।


> একজন মুসলিম পরকালের বিচার ও পুরস্কারের বিশ্বাস করে; জীবনে দায়িত্বশীল হয়ে ওঠে, পাপ থেকে বিরত থাকে।


> একজন অজ্ঞেয়বাদী পরকালের ব্যাপারে নিশ্চিত নয়, তাই তার মনে জাহান্নামের ভয়ও তেমন জাগে না। এর ফলে সে পাপের দিকে সহজে আকৃষ্ট হয় এবং ভোগ-ভিত্তিক জীবনের প্রতি বেশি ঝুঁকে পড়ে।


____________________________________________________


(সূরা আন্-নিসা (৪:৪০)


নিশ্চয়ই আল্লাহ বিন্দুমাত্রও (এক কণার সমানও) জুলুম করেন না।)


> আমার উদ্দেশ্য সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য বিষয়কে প্রমাণ করা নয়, আমার উদ্দেশ্য সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য বিষয়কে বিশ্বাস করানো।

Comments

Popular posts from this blog

অলৌকিক ঘটনা কি কেবল নবি রসূলদের সাথেই ঘটে?

ইসলামে চুরির শাস্তি

দার্শনিক নানা বিষয় একত্রে :